শিশুর জন্য সঠিক স্কুল নির্বাচন জরুরি

নতুন বছরের শুরুতেই আপনার সন্তান স্কুলে যাবে। সন্তানকে কোন স্কুলে ভর্তি করাবেন? সব দিক বিবেচনা করে স্কুল নির্বাচনের ব্যাপারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক স্কুল নির্বাচন করতে কোন কোন বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে ।

সন্তানের স্কুল নির্বাচনে ৩০টি পরামর্শ
আর কিছুদিন পরই স্কুলগুলোতে শুরু হবে নতুন শ্রেণীতে ভর্তির পালা। সন্তানকে কোন স্কুলে ভর্তি করা যায়, তা নিয়ে অভিভাবকদের ভাবনার শেষ নেই। ছাত্রসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই আনাচ-কানাচে গড়ে উঠেছে স্কুল। প্রতিটি স্কুলই নিজেদের প্রচার-প্রচারণার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে ভর্তি মৌসুমে। কিন্তু এগুলো অধিকাংশই মানসম্পন্ন নয়। এসব স্কুলের কোনটিতে ভালো পড়াশোনা হয়, কোনটির মান খারাপ, কোনটির ব্যয়ভার কেমন, দূরত্ব কতটুকু, খেলাধুলার সুযোগ আছে কি না—সব নিয়েই ভাবতে হয় অভিভাবকদের। সন্তানের স্কুলে ভর্তি নিয়ে কোন কোন বিষয় বিবেচনা করা উচিত, কীভাবেই বা স্কুল নির্বাচন করা যেতে পারে, সে সম্পর্কেই নিচে দেওয়া হলো ৩০টি পরামর্শ।

প্রস্তুতি পর্ব
১. প্রথমে আপনার এলাকার স্কুলগুলোর নাম জেনে একটা তালিকা করে নিন। এবার তারিখ জেনে নিয়ে নিজের সুবিধামতো স্কুলগুলো সম্পর্কে তথ্য জানতে যোগাযোগ করুন।
২. স্কুলে আপনার সন্তান কী চায়—ভালো করে জেনে নিন। হয়তো আপনার সন্তান এমন এক পরিবেশ চায়, যেখানে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ হবে।
৩. নিজের সন্তানের জন্য কী রকম স্কুল আপনি পছন্দ করেন? পারিবারিক পরিবেশে ছোট স্কুল, নাকি বেশি সুবিধা আছে এমন বড় স্কুল?
৪. বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, আশপাশে বাস করে এমন কারও কাছে কিংবা যেসব ছাত্রছাত্রী স্কুলে যায়, তাদের কাছেও সেই স্কুল সম্পর্কে তথ্য জানতে পারেন। নিজের পছন্দের স্কুলগুলোর তালিকা তৈরি করার পর একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন—বেশি টাকা লাগলেও বাড়ির কাছাকাছি কোনো স্কুলের দিকেই বেশি নজর দেবেন। এ ছাড়া বড় ভাইবোনেরা যেখানে আগে পড়াশোনা করে গেছে, সেসব স্কুলও পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন।
৫. স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। স্কুলে গিয়ে একটি নিয়মাবলি সংগ্রহ করে নিন, যাতে স্কুল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারেন।

কী কী জানবেন?
৬. স্কুল সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে দ্বিধা করবেন না। প্রধান শিক্ষকের কাছে স্কুল সম্পর্কে যেকোনো প্রশ্ন করার অধিকার আপনার আছে।
৭.সন্তানকে না নিয়ে নিজেই একদিন স্কুলে চলে যান। সন্তান সঙ্গে থাকলে যাতে সমস্যা না হয়, তাই আগেই যা যা জানার আছে, তা জেনে নিন।
৮. নিজের জানার ওপর আস্থা রাখবেন। স্কুলশিক্ষক আপনার প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দিচ্ছেন (সহজভাবে না ভাসা ভাসা কিংবা এড়ানোভাবে), তা মনোযোগসহকারে লক্ষ করুন।
৯. স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহার মনোযোগসহকারে লক্ষ করুন।
১০. ক্লাসের ছাত্রসংখ্যা কত, তা আপনাকে জানতে হবে। নিচের ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের ওপর বেশি নজর দেওয়া দরকার। তাই শিশু শ্রেণীতে ছাত্রসংখ্যা ২৫ থেকে ৩০-এর বেশি না হওয়াই ভালো। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণীতে তা যেন ২৫ থেকে ৪০ জনের মধ্যে সীমিত থাকে।

স্কুলের অবস্থা
১১. বেশির ভাগ স্কুলে একই বয়সের বাচ্চারা একই ক্লাসে পড়ে। কোথাও মিলিতভাবে তাদের শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। ফলে পাঁচ-ছয়-সাত বছরের শিক্ষার্থীরা একই সঙ্গে একই ক্লাসে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ছোটরা বড়দের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পায়।
১২. এবার জেনে নিন স্কুলের নিয়মশৃঙ্খলা সম্পর্কে। স্কুলের নিয়মকানুন কেমন? খুব বেশি কি কড়া? মোটামুটি কড়া নাকি শিথিল, তা জেনে নিন। লক্ষ করুন শ্রেণীকক্ষগুলো খুব ছোট কি না, কিংবা শিক্ষার্থীদের খুব ঠাসাঠাসি করে বসানো হয় কি না।
১৩. আপনার পছন্দের স্কুল বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় কেমন অংশ নেয়? ওই স্কুলে আপনার সন্তানকে ভর্তি করালে তার ওপর কি অতিরিক্ত চাপ এসে পড়বে? ওই স্কুল কি পাঁচ বছরের শিশুদের কাছ থেকে বাড়ির কাজ আশা করে?
১৪. কী করে আপনার ছেলে পড়তে শিখবে? আপনার পছন্দের স্কুল যে পদ্ধতি অনুসরণ করে, তার চেয়েও কি ভালো কোনো পদ্ধতি আছে?
১৫. স্কুল কর্তৃপক্ষ কি বাড়িতে বই নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে? সে ক্ষেত্রে মা-বাবাও সন্তানকে সাহায্য করতে পারেন। এর পরও যদি আপনার সন্তান অসুবিধায় পড়ে, তখন কী করবেন?
১৬. স্কুলে ইংরেজি ও অঙ্ক কেমন শেখানো হয়? স্কুলে কি কম্পিউটার আছে? শিক্ষার্থীরা কি সেগুলো ব্যবহার করতে পারে?
১৭. সংগীত শেখানো হয়? আপনার সন্তান কি তা শিখতে পারবে?
১৮. খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা কেমন? খেলার মাঠ আছে কি না? ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলা করে কি না। শ্রেণীকক্ষগুলো বেশি উত্তপ্ত কিংবা স্যাঁতসেঁতে কি না।
১৯. আপনি যে সংস্কার মেনে চলেন, আপনার সন্তানের স্কুল কি তা বিশ্বাস করে?
২০. যেকোনো সময়ে সন্তান সম্পর্কে চিন্তিত হলে স্কুলশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন কি না? বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া যেকোনো সময়ে স্কুলে গেলে আপনাকে কি যথাযোগ্য অভ্যর্থনা জানানো হয়?
২১. মনে রাখবেন, স্কুলশিক্ষক ও মা-বাবার সুন্দর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে স্কুলের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *